প্রকাশিত: Tue, Feb 21, 2023 4:27 PM
আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 8:31 PM

উচ্চ আদালতে বাংলায় রায় আদেশ দেওয়ার চর্চা বাড়ছে

খালিদ আহমেদ: দেশের নিম্ন আদালতে কিছু কিছু ক্ষেত্র ছাড়া শুনানিসহ বেশিরভাগ মামলার রায় ও আদেশ বাংলায় দেওয়া হয়। সুপ্রিম কোর্টেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইনজীবীদের এখন বাংলায় শুনানি করতে দেখা যায়। আদালতের জিজ্ঞাসায়ও দেখা যায় বাংলার ব্যবহার। ইংরেজির পাশাপাশি উচ্চ আদালতে এখন বাংলায় রায়-আদেশের সংখ্যা বাড়ছে। অথচ এক দশক আগেও বাংলায় রায় ও আদেশের সংখ্যা ছিল হাতে গোনা। তবে এ পর্যন্ত উচ্চ আদালতে বাংলায় কতটি আদেশ ও রায় হয়েছে, তার কোনো সুনির্দিষ্টভাবে তথ্য জানা যায়নি।

বর্তমানে প্রধান বিচারপতিসহ আপিল বিভাগে বিচারপতির সংখ্যা ৮ জন। হাইকোর্ট বিভাগে আছেন ৯১ বিচারপতি। বিচারালয়ের একাধিক অংশীজনের তথ্যমতে, চলতি ভাষার মাসের প্রথম দিন থেকে আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বাংলায় আদেশ ও সিদ্ধান্ত দেওয়া শুরু করেন, যা দেশের বিচার বিভাগের ইতিহাসে প্রথম। আর হাইকোর্ট বিভাগের দুজন বিচারপতি নিয়মিত বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়ে যাচ্ছেন। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় হাইকোর্ট বিভাগের ১০ থেকে ১৫ বিচারপতি বাংলায় রায়-আদেশ দিয়েছেন। তবে উচ্চ আদালতে বাংলা ভাষার ব্যবহার আরও বাড়ানোর সুযোগ আছে বলে মনে করেন অংশীজনেরা।

উচ্চ আদালতে বাংলার ভাষার ব্যবহার, প্রয়োজনীয়তা ও সীমাবদ্ধতা’ শীর্ষক বইয়ে এক নিবন্ধে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ও সাবেক প্রধান বিচারপতি প্রয়াত মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান উল্লেখ করেছেন, ন্যায়বিচার যদি সদগুণ হয় এবং জনগণের কল্যাণের জন্যই যদি এর কাজ হয়, তবে তা জনগণের ভাষাতেই হওয়া উচিত।

আশার বিষয়, বাংলায় রায়আদেশ লেখার চর্চা বৃদ্ধির পাশাপাশি সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত সব রায় ও আদেশ বাংলায় দেখতে সোমবার থেকে নতুন প্রযুক্তিসেবা যুক্ত করা হয়েছে। এখন থেকে গুগল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিচারপ্রার্থী ও আইনজীবী বা যেকোনো ব্যক্তি ওয়েবসাইটে ইংরেজিতে প্রকাশিত রায়-আদেশ বাংলায় অনুবাদ করে দেখতে পারবেন। এর আগে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে ১ ফেব্রুয়ারি থেকে সুপ্রিম কোর্টের ওয়েবসাইটের ‘বাংলা সংস্করণ’ চালু করা হয়।

অবশ্য সাধারণ মানুষ ও বিচারপ্রার্থীরা যাতে রায় বুঝতে পারেন, সে জন্য ইংরেজিতে দেওয়া রায় বাংলায় অনুবাদ করতে ২০২১ সালে সুপ্রিম কোর্টে একটি সফটওয়্যার যুক্ত হয়। আমার ভাষা নামের এই সফটওয়্যারের মাধ্যমে আদালতের রায় বাংলায় অনুবাদ করা যায়।

সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি মোমতাজ উদ্দিন ফকির বলেন, উচ্চ আদালতে ৮০ থেকে ৯০ শতাংশ মামলার শুনানি বাংলায় হচ্ছে, যা খুবই ইতিবাচক। আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগ ইতিপূর্বে বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। 

বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম (বর্তমানে আপিল বিভাগে) রাজনৈতিক দল হিসেবে জামায়াতের নিবন্ধন অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৩ সালে বাংলায় রায় লিখেছেন। এক যুগের বেশি হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি থাকাকালে এই বিচারপতি বাংলায় প্রায় ৩০ হাজার রায় ও আদেশ দিয়েছেন বলে জানা গেছে।

গাজীপুরে আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য আহসান উল্লাহ মাস্টার হত্যা মামলায় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান (বর্তমানে আপিল বিভাগে) ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথের (বর্তমানে অবসরপ্রাপ্ত) সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ ২০১৬ সালের ১৫ জুন বাংলা রায় দেন।

অনুসন্ধানে জানা যায়, বিভিন্ন সময়ে হাইকোর্ট বিভাগের বেশ কয়েকজন বিচারপতি বাংলায় রায় ও আদেশ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে প্রয়াত বিচারপতি এফ আর এম নাজমুল আহাসান, বিচারপতি এ এন এম বসির উল্লাহ, বিচারপতি মো. রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম, বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমান, বিচারপতি ভীষ্মদেব চক্রবর্তী, বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বিচারপতি মো. আতোয়ার রহমান, বিচারপতি মো. রিয়াজ উদ্দিন খান ও বিচারপতি মো. জাকির হোসেন রয়েছেন।

জানতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন গত শনিবার বলেন, ১০ বছর আগেও বাংলায় রায়আদেশ ছিল হাতে গোনা। এখন আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগে ৭০ শতাংশ মামলায় আইনজীবীদের বাংলায় যুক্তি উপস্থাপন করতে দেখা যায়। উচ্চ আদালতের কার্যক্রমে বাংলা ভাষার প্রচলন আরও বাড়বে। সম্পাদনা: এল আর বাদল